আমেরিয়াহ শেল্টারে বোম্বিং: এক ভয়াবহ গণহত্যার কাহিনী:
১৯৯১ ইং সনের ১৩ই ফেব্রুয়ারী : ইরাকের বাগদাদের সন্নিকটে আমেরিয়াতে একটি
বোমাপ্রতিরোধক শেল্টারে আশ্রয় নেওয়া হাজারও সাধারণ ইরাকীর উপর মানবতার
শত্রু আমেরিকা এক লোমহর্ষক বোমা হামলা চালায়। এ হামলাতে ব্যবহার করা হয় দুই
হাজার পাউন্ড ওজনের দুটি লেজার নিয়ন্ত্রিত স্মার্ট বোমা।
প্রথম বোমাটি শেল্টারের দেয়ালে গর্তের সৃষ্টি করে এবং দ্বিতীয় বোমাটি
সরাসরি ভেতরে আশ্রয় নেয়া জনগনের উপর বিধ্বস্ত হয়। রাত চারটায় চালানো এ বোমা
হামলার সময় সবাই ছিল গভীর নিদ্রায় শায়িত।
পশ্চিমা মিডিয়ার হিসেবেই যাতে প্রাণ হারান ৪০৮ জন সাধারণ নাগরিক।
প্রকৃতপক্ষে এ সংখ্যা আরও অনেক বেশী। নিহতদের মাঝে ২৬১ জন নারী ও ৫২টি শিশু
ছিল। সবচেয়ে ছোট নিহত শিশুটির বয়স ছিল মাত্র সাত দিন। নিহতদের অধিকাংশই
বিস্ফোরণের আগুনে পুড়ে কয়লা হয়ে গিয়েছিল। যাদেরকে আর আলাদাভাবে চিহ্নিত করা
সম্ভব হয়নি।
ওমর আদনান, হামলায় বেঁচে যাওয়া একজন মুসলিম বলেন, তিনি, তার তিন বোন, আর
তার বাবা-মা সেখানে আশ্রয় নিয়েছিলেন। এবং তিনি ছাড়া পরিবারের সকলেই এ
হামলায় নিহত হয়েছেন।
তিনি বর্ণনা করেন: “আমি ঘুমিয়ে ছিলাম, হঠাৎ প্রচন্ড গরমে আমার ঘুম ভেঙে
গেলে দেখি আমার কম্বলে আগুন ধরে গেছে। আমি পাশে থাকা আমার আম্মুকে স্পর্শ
করার চেষ্টা করি কিন্তু আমার হাতে কেবল একটুকরো মাংসপিণ্ড উঠে আসে।”
এ ঘটনার পর পেন্টাগন মিথ্যা দাবী শুরু করে যে, সেটি একটি মিলিটারী কমান্ড
সেন্টার ছিল। কিন্তু আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাগুলো ও বিদেশী
সাংবাদিকরা সেখানে পরিদর্শন করে এটা বলতে বাধ্য হয় যে, সেটি ছিল
সম্পূর্ণভাবে একটি সিভিলিয়ান শেল্টার। যাতে সাধারণ ইরাকীরা আশ্রয়
নিয়েছিলেন। সেখানে কোনো সামরিক নিদর্শনের অস্তিত্বই ছিল না।
সাতটি ইরাকী পরিবার, যারা এ হামলায় তাদের স্বজনদের হারিয়েছেন, তৎকালীন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট সিনিয়র জর্জ বুশসহ, ডিকচেনী, কলিন পাওয়েলদের বিরূদ্ধে
যুদ্ধাপরাধের মামলা করেছিলেন। কিন্তু তা ২০০৩ ইং সনে বন্ধ করে দেওয়া হয়।
আমেরিকার পরিচালিত উপসাগরীয় যুদ্ধে লক্ষ লক্ষ নিরীহ ইরাকী জনগণ নিহত
হয়েছিল। এভাবেই আমেরিকা ও তার দোসররা বিভিন্ন স্থানে শান্তি প্রতিষ্ঠা
করে??!!
১৯৯১ ইং সনে আল-ক্বায়দার কোনো অস্তিত্বই ছিলনা। তখন কোনো যোদ্ধা সংগঠন
আমেরিকা-ইউরোপে হামলা চালায় নি, এরপরেও পশ্চিমা ক্রুসেডাররা আফ্রিকা ও
আরবের মুসলিম ভূমিগুলোতে রক্তনদী বইয়ে দিয়েছিল।
যেসব বোধহীন মুসলিমরা বর্তমানে আমেরিকার কথিত সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের
পক্ষে উকালতি করে, তাদেরকে হয়তো এ ঘটনাগুলো কিছুটা হলেও বোধশক্তি ফিরে পেতে
সাহায্য করবে।
0 Comments