add

নয়-এগারো কী শিখালো! কাদের স্বার্থে হামলা হলো!?

সম্প্রতি আফগানিস্তানের তালেবান  সম্পর্কে প্রথম আলো নামক একটি সংবাদমাধ্যমের করা মন্তব্য! পত্রিকাটির অনলাইন ভার্সনে নয়-এগারো কী শেখাল?' শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটিতে তালেবান যোদ্ধাদের  সম্পর্কে বলেছে-

অথচ আফগানিস্তানের তালেবানদের পেলে-পুষে বড় করেছিল যুক্তরাষ্ট্রই। অভিযোগ আছে, আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের আগ্রাসনের পাল্টা প্রতিক্রিয়া হিসেবেই তালেবানকে দুধকলা দিয়েছিল ওই সময়কার মার্কিন প্রশাসন।  [প্রথম আলো]

কথিত ঐ সংবাদমাধ্যমটি সর্বজ্ঞ ভাব ধরতে গিয়ে খুব মারাত্মক একটি মিথ্যাচার করে ফেলেছে!! বরং, বিজ্ঞ লোকদের নিকট এটা হাস্যকরও মনে হতে পারে। কেননা, ‘ প্রথম আলোর উপরোক্ত মন্তব্যটি কোন সংবাদমাধ্যমের পক্ষ থেকে হওয়ার আশা করা যায় না। প্রথম আলোর দাবি হলো- তালেবান যোদ্ধাদের রুশদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করেছিল। অথচ, মাথামোটা মিডিয়াটি মিথ্যাচার করার পূর্বে এ কথাটি একটিবারও ভাবেনি যে, তালেবান প্রতিষ্ঠাই তো হয়েছে ১৯৯৪ সালে, আর রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ শেষ হয়েছে ১৯৮৯ সালে! তাহলে, ঐ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র কী করে তালেবানদের সাহায্য করলো!?! 
এই সংবাদমাধ্যমগুলোর প্রতি  আরো কিছু প্রশ্ন, সংশয় রয়ে যায়! আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন বিষয়ে সম্পৃক্ত করেও বিভিন্ন সময় তালেবানদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার-মিথ্যাচার করতে দেখেছি কথিত প্রথম আলোনামক সংবাদমাধ্যমটিকে! তারাবিভিন্ন প্রতিবেদনে বলেছে যে, আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনে তালেবান যোদ্ধারা জড়িতএবং আফিম রপ্তানি করে উপার্জিত অর্থ তালেবান যোদ্ধারা কাজে লাগান!! কেবল ধারণা করে এরকম জঘন্যঅপবাদ, মিথ্যাচার তারা তালেবানদের নামে প্রচার করে। তাদের মিথ্যাচারের জবাবে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস ও যৌক্তিক বিশ্লেষণ তুলে ধরার চেষ্টা করব ।
আফগানিস্তানে সর্বপ্রথম আফিম সরবরাহ করে যুক্তরাষ্ট্রেরগোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ! যদিও এর পূর্বে স্বল্প মাত্রায় আফিমের চাষ হতো বলে জানাযায়। দক্ষিণ এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য বিস্তারে যুক্তরাষ্ট্রের প্রচেষ্টার কোনত্রুটি ছিল না কখনোই! কেননা, এই অঞ্চল থেকে যুগে যুগে লুটেরার দল, যা পেরেছে নিজদেশে পাচার করেছে! যুক্তরাষ্ট্রেরও সেরকম একটা ধ্যান-ধারণা অবশ্যই ছিল বলেবিশ্লেষকগণ মনে করেন। আর, সেজন্য প্রয়োজন এই অঞ্চলে নিজেদের আধিপত্য বিস্তার এবং এভূমির মানুষদেরকে শোষণ করার ক্ষমতা অর্জন! সে লক্ষ্যেই যুক্তরাষ্ট্রআফগানিস্তান অভিযান শুরু করে। তার এই অভিযানকিন্তু ২০০১ সালে আফগানে হামলা করার মাধ্যমে নয়, বরং আরো পূর্ব থেকেই শুরু! যাইহোক, সিআইএ-এর আফিম সরবরাহের পর আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন শুরু হয় এবং সেগুলোপাচার হতো পশ্চিমা দেশগুলোতে! বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে!! তারপর, রাশিয়ার পলায়নেরপর ক্ষমতালোভী জালিম সরকারের কবল থেকে আফগান জাতিকে উদ্ধারে অস্ত্র ধরেন তালেবানমুজাহিদগণ। খুব দ্রুতই দেশটিতে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হনতালেবানরা। ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক শাসনকার্য পরিচালনা করা শুরু করেন। কিন্তু, দীর্ঘ সময়ের যুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তানকে উত্তম অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে সময়েরপ্রয়োজন। তালেবান সরকার অতি অল্প সময়ে জনসাধারণের মন জয় করে নিতে সক্ষম হন এবং কেবল বছরখানেকের মধ্যেই পশ্চিমাদের সরবরাহ করা আফগানজাতির জন্য বিষস্বরূপ আফিমউৎপাদনকে শূন্যের কোঠায় নিয়ে আসেন। যা স্বীকার করতে বাধ্য হয় জাতিসংঘও! কিন্তু, যুক্তরাষ্ট্রের আফগান হামলার পর তালেবান সরকারের পতন ঘটলে আবারও সুযোগ সৃষ্টি হয়আফিম উৎপাদনের। আর, সে কারণেই যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএপুনরায়ফিরে আসে আফিম উৎপাদনে! তারা পাকিস্তান বর্ডারসহ আফগানিস্তানের বিশাল ভূমিতে পুনরায়আফিম উৎপাদন শুরু করে।দ্যা গার্ডিয়ানএর সূত্রানুসারে, ২০০৩ সালেআফগানিস্তানেরজিডিপির ৬২% আসে আফিম থেকে!! [সূত্র: https://www.theguardian.com/news/2018/jan/09/how-the-heroin-trade-explains-the-us-uk-failure-in-afghanistan]
অতঃপর ঘটে গেল অদ্ভুত ঘটনা!!!! যারা আফিম উৎপাদন বন্ধ করেশূন্যের কোঠায় নিয়ে এসেছিল, সেই তালেবানদের ‍বিরুদ্ধেই অপবাদ দিল আফিম উৎপাদনের!!আর, যারা আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের শুরু করেছে, মিডিয়া তাদেরকে বানিয়ে দিল আফিমউৎপাদনে বাধাদানকারী রূপে!!! খুবই অদ্ভুত!! এভাবে চলতে থাকলো, আর দিনে দিনে আফিমউৎপাদন এত বেশি বেড়ে গেল যে আফগানিস্তান উঠে গেল আফিম উৎপাদনে শীর্ষে!
আর, এদিকে আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদন বন্ধ করার দাবিদারদেরনিজের দেশে মাদকাসক্তদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেল!ক্ল্যারি ফেল্টার নামক এক আমেরিকান বিশ্লেষকেরমন্তব্য হলো- যুক্তেরাষ্ট্রে মাদকাসক্ত মহামারী আকার ধারণ করেছে! ২০১৭ সালের ২৬শেডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রকে ঝাঁপটে ধরা সমস্যাগুলোরমধ্যে অন্যতম হলো মাদক! প্রতি সপ্তাহেআফিমসংক্রান্ত মাদকে আক্রান্ত হয়েমৃত্যুবরণ করা লোকের সংখ্যা ৮ শতাধিক!! প্রতিবেদনটিতে আরো বলা হয়, মিলিয়ন মিলিয়নআমেরিকান আফিমে আসক্ত!![ সূত্র:https://www.cfr.org/backgrounder/us-opioid-epidemic]
সুবহানাআল্লাহ! একদিকে যুক্তরাষ্ট্রের আগ্রাসনের ভূমি আফগানিস্তানআফিম উৎপাদনে শীর্ষে! আরেকদিকে, যুক্তরাষ্ট্রে আফিমে আসক্ততা মহামারী আকার ধারণকরেছে!! কত মিল দুই জায়গায়!
তাহলে কারা আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের নেপথ্যে অবদানরাখছে!!! ??? জবাব চাই কথিত সংবাদমাধ্যমগুলোর থেকে। আজ যারা আফগানিস্তানের অধিকাংশএলাকা তালেবানদের নিয়ন্ত্রাধীন বিবেচনায় আফগানিস্তানে আফিম উৎপাদনের সমস্ত দোষারূপতালেবানদের করে থাকে তাদের এই আফিম উৎপাদনের পূর্ব ইতিহাস জানা উচিত। আফিমউৎপাদনের সাথে মিথ্যাচার করে তালেবানকে জড়ানো যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম কূটচালগুলোরএকটি! এতে, তাদের দুইটা ফায়দা আছে বলে মনে হয়- এক. যুক্তরাষ্ট্র যে এই আফিমউৎপাদনের শীর্ষ উদ্যোক্তা, তা যেন ঢাকা পড়ে যায়! আর, দুই. তালেবানদের দোষারূপ করারমাধ্যমে বহির্বিশ্বে বিশেষ করে মুসলিমবিশ্বে তালেবানদের প্রতি বিদ্বেষ এবং ঘৃণাছড়ানোর অপচেষ্টা!

এতসব কূটচালের পরেও আফগানিস্তানে  যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো জোটের পরাজয়ের বিষয়টি সুস্পষ্ট, এখন তারা পলায়নের পথ খুঁজছে!

Post a Comment

0 Comments