add

রাজস্থানের ভুতুড়ে শহর কুলধারাঃ

কোথাও দাঁড়িয়ে রয়েছে পুরনো ভাঙা দালান। কোথাও ধ্বংসস্তুপ। যতদূর দেখা যায় শুধুই নির্জনতা চেপে ধরে রয়েছে। কেমন একটা গা ছমছম ভাব চারদিকে। ঠিকানা রাজস্থানের কুলধারা গ্রাম। লোকমুখে শোনা যায়, সেখানে নাকি রয়েছে ভূতের রাজত্ব। একসময় ভারতবর্ষের ঐতিহাসিক সভ্যতার অনুসন্ধান করতে নৃতাত্বিকরা পরীক্ষা চালাতে শুরু করেন সেই এলাকায়। ভূতটুত আজকাল তেমন আর কেউ বিশ্বাস করেন না। কিন্তু জয়সলমের থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে কুলধারা গ্রামে গেলেই গায়ে কাঁটা দেবে।কুলধারা, অভিশপ্ত এক গ্রাম। গ্রাম বললে ভুল হবে। সেখানে ছিল মন্দির, কারুকার্য করা বাড়ি। মানুষের বসবাস ছিল। গ্রাম না বলে একে প্রাচীন শহরের তকমা দেওয়া যেতেই পারে। তবে আজ তার বেশিরভাগটাই ধ্বংসস্তুপ।                                             
 নানা কাহিনি শোনা যায় কলুধারা গ্রামকে ঘিরে। একসময় ১,৫০০ মানুষের বাস ছিল কুলধারা গ্রামে। সেখানে মূলত পালিওয়াল শ্রেণির ব্রাহ্মণদেরই বাস ছিল। গ্রামে ধনসম্পদ ভালোই ছিল। রাজার মেয়ে ছিলেন খুব সুন্দরী। সেই রাজকন্যার দিকেই নাকি নজর ছিল ওই গ্রামের মন্ত্রীর। জোর করে তুলে নিয়ে রাজকুমারীকে বিয়ে করবে পণ করেন সেই মন্ত্রী। রাগী মন্ত্রী এও পণ করেন, যদি তাঁর স্বপ্নপূরণ না হয় তবে জ্বালিয়ে শেষ করে দেবেন পুরো গ্রামটাকেই।

 তবে মন্ত্রীমশাইয়ের সেই ইচ্ছায় অমত প্রকাশ করেন পালিওয়াল ব্রাহ্মণরা। একসঙ্গে সভা করেন তাঁরা, চলে বহু আলোচনা। কী আলোচনা হয়, তা কেউ জানে না। কিন্তু অপরদিকে ঘটে যায় আরেক কাণ্ড। সেই রাতের মধ্যেই মিলিয়ে যায় গোটা গ্রাম। ফাঁকা বাড়ি, গোয়াল ভর্তি গোরু, সোনাদানা সবই যেমনকার তেমন রয়ে যায়। শুধু গায়েব হয়ে যায় গ্রামের সব মানুষ। শোনা যায়, গ্রামের মানুষ নিজেদের সম্মান রক্ষা করতেই নাকি গ্রাম ছেড়ে চলে যায় অন্য জায়গায়। তবে চলে যাওয়ার আগে অভিশাপ দিয়ে যায়। সেই থেকে কুলধারা গ্রাম অভিশপ্ত গ্রামে পরিণত।

 শোনা যায়, পরবর্তীকালে গ্রামে ধনসম্পত্তি লুটপাট করার জন্য নাকি কিছু মানুষ দখল নেয় সেই গ্রামে। চলে হইহুল্লোড়, আনন্দ উৎসব। মাঝরাতের পরই গ্রাম থেকে ভেসে আসে ভয়ানক সব আর্তনাদ। রক্ত জল করা সেসব চিৎকার। পরদিন সকালে আশপাশের গ্রামের লোকেরা দেখে সেই দখলদারদের ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে রয়েছে গ্রামের চারপাশে। ভয়ংকরভাবে খুন হলেও কে খুন করল, কী করেই বা করল, সেসব জানা যায়নি। শোনা যায়, সেই থেকে আর কেউ সাহস করে না সেই গ্রামে রাত কাটাতে।


বিজ্ঞানের উন্নতি হয়েছে। ভূত-প্রেত বলে আদতেও কিছু আছে কি না সেই চর্চা, আলোচনা ও পরীক্ষা হয়েছে বহু। তবে কুলধারা গ্রামের এই ভৌতিক কাহিনির সত্যতা যাচাই করতে দিল্লির প্যারানর্মাল গবেষকরা যান সেই গ্রামে। যাঁরা কিনা এর আগে ভৌতিক তকমা ঘুচিয়ে ছিলেন বহু জায়গার। শোনা যায়, কুলধারা গ্রামে ভূতুড়ে কারবারের সাক্ষী হতে হয় গবেষকদেরও। আশপাশের বাড়িঘর থেকে নাকি ভেসে আসতে শোনা যায় কান্নার আওয়াজ। গাড়ির কাছে ভেসে ওঠে বাচ্চাদের হাতের ছাপ। শোনা যায়,ফিসফাস। সবমিলিয়ে হাড় হিম করা পরিবেশের মুখোমুখি হতে হয় তাঁদের। পরদিনই সকালে প্রাণ হাতে করে ফিরে আসেন গবেষকের দল।কুলধরার  রহস্য রহস্যই থেকে যায় ।


Post a Comment

0 Comments