ইমাম হাসান বিন আলী রাদিয়াল্লাহু আনহু : সংক্ষিপ্ত জীবনী
হাসান বিন আলী বিন আবু তালিব,আবু মুহাম্মাদ,রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নাতি আর নয়নমণি। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের হাদীস অনুযায়ী তিনি শেষ খলীফা।হাসান ৩য় হিজরীর রমযান মাসের মাঝামাঝিতে জন্মগ্রহণ করেন।
তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে অনেক হাদীস বর্ণনা করেছেন। আর তার থেকে আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) আর তার পুত্র আদাহ,আবুল হাওরা,রাবীয়া বিন শিবান,শাবী প্রমুখ তাবেঈ হাদীস বর্ণনা করেছেন।
আনাস (রাঃ) থেকে বুখারী বর্ণনা করেছেন,“রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের চেহারার সাথে অধিক মিল হযরত হাসান (রাঃ) ছাড়া আর কারো ছিল না।”
ইমাম হাসানের সম্মানিত পিতা আলী (রাঃ) এর শাহাদাত লাভের পর তিনি ছয় মাস খিলাফতের তখত অলংকৃত করেন। তার কাছে কুফাবাসী বাইয়াত করেছিলো। এরপর মুয়াবিয়া (রাঃ) লড়াই করতে এলে তিনি এ শর্তে খিলাফতের দায়িত্ব তার উপর অর্পন করেন যে – আপনার পর খিলাফত আমার অধীনে থাকবে। মুয়াবিয়া (রাঃ) এ শর্ত গ্রহণের মাধ্যমে রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ভবিষ্যদ্বাণী সূত্রে পরিণত হয়। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছিলেন,“আমার এ নাতি (হাসান বিন আলী) মুসলমানদের দুটি দলের মধ্যে সন্ধি করবে।”
তিনি রবিউল আউয়াল মাসে, আবার কারো মতে ৪১ হিজরীর রবিউস সানী মাসে খিলাফতের মসনদ বর্জন করেন। বন্ধুমহল তাঁকে غار المؤ منين (মুমিনদের মধ্যে লজ্জাশীল ব্যক্তি) বলে সম্বোধন করতো। তিনি বলেন, “ ‘আর’ (লজ্জা) শব্দটি ‘নার’(অগ্নি) শব্দ থেকে শ্রেয়।”
একদিন এক ব্যক্তি এসে তাঁকে বললেন,“ السلام عليكم يا مذل المؤ منين (হে মুসলমানদের আপমানকারী, আপনার প্রতি সালাম)।” এ প্রেক্ষিতে তিনি বললেন,“আমি মুসলমানদের অপমানকারী নই। আমি তোমাদের রাজত্বের জন্য যুদ্ধ আর হত্যার দিকে ঠেলে দেওয়াকে জঘন্য কাজ মনে করি।” অতঃপর তিনি কুফা ছেড়ে মদীনা শরীফে চলে আসেন আর এখানেই বসবাস করেন।
জাবের বিন নাযীর থেকে হাকিম বর্ণনা করেছেনঃ হাসানকে জিজ্ঞেস করা হয়,“আপনি কেন আবার খিলাফত কামনা করছেন ?” তিনি বললেন,“যখন আরবের লোকদের মাথাগুলো আমার হাতের মুঠোয় ছিল,আমি চাইলে তাদেরকে যুদ্ধ করার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে পারতাম,তখন আমি শুধু আল্লাহ তাআলার সন্তুষ্টির জন্য খিলাফত ত্যাগ করেছি আর লোকদের রক্তের প্লাবন সৃষ্টি করানো থেকে পৃথক হয়ে গেছি। তো আজ হিজাযবাসীর বিষন্নতা ও মুসিবতগ্রস্ততার কারণে কেন তা গ্রহণ করতে যাবো ?”
হাসানের স্ত্রী জাআদ বিনতে আশয়াস বিন কায়েসকে মদীনায় ইয়াযিদ গোপনে এ প্রস্থাব দেয় যে,হাসানকে বিষ প্রয়োগ করতে পারলে আমি তোমাকে বিয়ে করবো। সে ধোঁকায় পড়ে তাঁকে বিষ খাওয়ায়। ফলে তিনি ৪৯ হিজরী, কারো মতে ৫০ হিজরীর রবিউল আউয়াল মাসের পাঁচ তারিখে বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে শাহাদাত লাভ করেন। তিনি শহীদ হওয়ার পর ঘাতক ইয়াযিদকে তার প্রতিশুতির কথা মনে করিয়ে দিলে সে তা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দিলো,“যে নারী ইমাম হাসানের সংসার ভেঙ্গেছে, আমি তাকে নিজের জন্য কিভাবে গ্রহণ করবো ?”
তার ইন্তেকালের সময় হযরত ইমাম হুসাইন বারবার বিষ প্রয়োগকারীর নাম জানোতে চাইলে তিনি বললেন, “হত্যাকারীকে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে আমার সন্দেহ রয়েছে। আল্লাহ তাআলা এর প্রতিশোধ গ্রহণকারী। আর সে যদি হত্যাকারী না হয়, তাহলে কেন আমি তাকে হত্যা করাবো ?”
আব্দুল্লাহ বিভিন্ন সূত্রে কয়েকটি বর্ণনা বর্ণিত করেছেনঃ হাসান (রাঃ) মৃত্যুর প্রাক্কালে হুসাইন (রাঃ) কে বলেন, “রাসুলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পর তোমার পিতা খিলাফত কামনা করেছিলেন। কিন্তু আবু বকর (রাঃ) খিলাফত প্রাপ্ত হোন। এরপর হযরত উমর (রাঃ) খলীফা হোন। তারপর পূর্ণ বিশ্বাস ছিল যে, আলোচকগণ এবার আলী (রাঃ) কে বাদ দিবেন না। কিন্তু উসমান (রাঃ) খলীফা হয়ে যান। তার শাহাদাতের পর আলী (রাঃ) খলীফা হলে উভয় পক্ষ থেকে তলোয়ার নিস্কোশিত হয়। এতে আমি বুঝে গেছি, আমাদের বংশে খিলাফত আর নবুওয়াত একত্রে জমা হবে না। সুতরাং খিলাফতের জন্য কুফার নির্বোধ লোকেরা তোমাকে যেন বের না করতে পারে। রাসূলুল্লাহ’র (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) পাশে আমাকে দাফন করার জায়গা দেওয়ার জন্য আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর কাছে আবেদন করলে তিনি তা মঞ্জুর করে বললেন, আপনার মৃত্যুর সময় আমার প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিবেন,কিন্তু আমার মন বলছে তাঁকে পূর্বের প্রতিশ্রুতির কথা মনে করিয়ে দিলে অন্যরা সেই জায়গা দানে বাধা দিবে। যদি তারা সেখানে আমাকে কবর দিতে বাধা দেয়, তাহলে জেদাজেদি করবে না।”
ইমাম হাসান (রাঃ) এর ইন্তেকালের পর হযরত ইমাম হুসাইন (রাঃ) হযরত আয়েশা সিদ্দীকা (রাঃ) এর কাছে যান আর তিনি অনুমতি দেন,কিন্তু মারওয়ান বাধা দেয়। ফলে ইমাম হুসাইন আর তার সহচরবৃন্দ তলোয়ার উত্তোলন করলে আবু হুরায়রা (রাঃ) ইমাম হাসানের ওসীয়ত স্মরণ করিয়ে দিয়ে সংঘাতে যেতে নিষেধ করেন। অবশেষে ইমাম হাসানকে হযরত ফাতেমার পাশে দাফন করা হয়।
0 Comments