ইসলামি বিশ্ব তথা ইসলামি দেশ সমূহে পর্দাহীনতাঃ যেভাবে শুরু
![]() | ||
১৮৪০ সালে অগাস্ট কোডার কর্তৃক অঙ্কিত মুহাম্মদ আলি পাশার পোর্ট্রেট | রাজত্বকাল ১৭ মে ১৮০৫ – ২ মার্চ ১৮৪৮ |
রসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আ’লাইহি ওয়া সাল্লাম) এর যুগ থেকে হিজরি চৌদ্দ
শতাব্দীর মাঝ পর্যন্ত মুসলিম নারীরা পূর্ণ পর্দা করতো,চেহারাও ঢেকে রাখতো,
শারীরিক কোন সৌন্দর্য প্রদর্শন করে পথে-ঘাটে বের হতো না। হিজরি চৌদ্দ
শতাব্দীর শেষভাগে ইসলামী শাসনব্যবস্থা তথা খিলাফতের ধারা সমাপ্তির পরপরই
মুসলিম সমাজে ইসলামী রীতি-নীতিতে বিকৃতি সাধনে পশ্চিমা উপনিবেশই প্রথমত
প্রধান ভূমিকা রাখে। এক্ষেত্রে মিশরের নারীরাই সবার আগে চেহারা থেকে পর্দা
খুলে ফেলে।
১৮২০ এর দশকে মিশরের বাদশাহ মুহাম্মাদ আলি পাশা উচ্চ শিক্ষার জন্য মুসলিম শিক্ষার্থীদের
কে ফ্রান্সে পাঠাতে থাকে। সেসব শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক শিক্ষার্থীর নাম ছিল
রেফায়া তাহতাবী। সে শিক্ষাগ্রহন শেষে মিসরে ফিরে আসার পর নারীদের চেহারা
থেকে পর্দা খুলে ফেলার জন্য আন্দোলন শুরু করলো। রেফায়া তাহতাবীর পর মারকাস
ফাহমী নামক এক খ্রিস্টান লেখক এ আন্দোলন অব্যাহত রাখলো। সে “আল-মারআতু
ফিশ-শারকী” নামে একটি বই লিখলো, যে বইতে সে নারীদেরকে পর্দা থেকে বেরিয়ে
আসার এবং পুরুষ-নারীর অবাধ বিচরনের প্রতি ব্যাপক উৎসাহ যোগালো।
![]() |
কাসিম আমিন বেগ(১৮৬৫-১৯০৮)মিসর কায়রো |
কুর্দী বংশোদ্ভূত পশ্চিমী সংস্কৃতি প্রভাবান্বিত কাসিম আমিন বেগ পর্দার বিরুদ্ধে ১৯০১ সালে তো এ ব্যাপারে “তাহরিরুল মারআহ” (নারীর মুক্তি) আর “আল-মারআতুল জাদিদাহ” (আধুনিক নারী) নামের দুটো বইও লিখে ফেলে। কাসিম আমিনের বই দুটো পড়ে সাদ যাগলুল আর আহদম যাগলুল খুবই প্রভাবিত হল। তারা দুজনও পর্দাহীনতার এ আন্দোলনকে সফল করতে উঠেপড়ে লাগলো।
![]() | |
সাদ যাগলুল(১৮৫৯-১৯২৭)১৭ তম প্রধানমন্ত্রী মিশর |
![]() |
হুদা শারাবী(১৮৭৯-১৯৪৭)সুত্র: উইকিপিডিয়া |
অবশেষে সাদ যাগলুল ব্রিটেন থেকে ফিরে আসার দিন ঘনিয়ে এলো। তাকে অভ্যর্থনা জানানোর জন্য বিমান বন্দরে দুটো বড় তাঁবু স্থাপন করা হল। একটিতে ছিল পুরুষ, অপরটিতে নারী। সাদ যাগলুল বিমান থেকে নেমে সোজা নারীদের তাবুর দিকে চললো, যে তাঁবু পর্দাশীনা বহু নারীর উপস্থিতে ভরপুর ছিল। সে তাঁবুতে প্রবেশ করা মাত্রই হুদা শারাবী তাকে উষ্ণ অভ্যর্থনায় বরণ করে নিলো। হুদা নিজেও তখন আপাদমস্তক পর্দাবৃত ছিল। সাদ যাগলুল এক ঝটকায় হুদার চেহারা থেকে পর্দা খুলে ফেললো। পুরো তাঁবু তখন করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠলো। সাথে সাথে তাঁবুতে উপস্থিত বাকি সব নারীরাও চেহারা থেকে পর্দা সরিয়ে ফেললো। আর এভাবেই পর্দাহীনতার আনুষ্ঠানিক সূচনার পূর্ব পরিকল্পিত নাটক মঞ্চায়িত হল।
পরে কায়রোতে নারী স্বাধীনতা আন্দোলনের আরেকটি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। সে সমাবেশে সাদ যাগলুলের স্ত্রী সফিয়া ফাহমীও উপস্থিত ছিল। সে প্রকাশ্য দিবালোকে হাজারো মানুষের সামনে নিজের পরিধেয় বোরকাটি খুলে পায়ের নিচে মাড়িয়ে ফেললো। সমাবেশে উপস্থিত বাকি নারীরাও তার অনুসরণ করলো। তারপর মাটিতে পড়ে থাকা সেই বোরকাগুলোকে আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হল।
![]() |
সফিয়া ফাহমী(১৮৭৬-১৯৪৬)ফার্স্ট লেডি |
ধীরে ধীরে পথে ঘাটে পর্দাহীনা মুসলিম নারীর নির্লজ্জ চলাফেরা মামুলি বিষয় হয়ে গেলো। যে মিসরের হাজার বছরের ইতিহাসে পথে-প্রান্তরে মুসলিম নারীর বেপর্দা চলাফেরার নজির মেলাটাই দুস্কর ছিল, সেখানে নারী স্বাধীনতার নামে পর্দাহীনতার কুপ্রথা ব্যাপকতা লাভ করলো।
এরপর নারী স্বাধীনতা আন্দোলন নামের সংগঠনটি তাদের পরবর্তী এজেন্দা বাস্তবায়নে তৎপর হল। তারা নারীদেরকে ঘর থেকে বের করে পুরুষের মাঝে দাঁড় করিয়ে দিলো। এখন তো নারী এয়ার হোস্টেস হয়েছে, বিমানে যাত্রীদের সেবিকার কাজ করছে। মদের দোকানে কাস্টমারের গ্লাস ভরে দিচ্ছে। হোটেল রিসিপশনে রূপের পসরা সাজিয়ে গ্রাহকের কামনার খোরাক যোগাচ্ছে। আর এভাবেই মুসলিম নারী তার স্বকীয়তা হারিয়ে পুরুষের মনোরঞ্জনের পণ্যে পরিণত হয়েছে।
অবশেষে কালের আবর্তে মুসলিম দেশগুলোতেও ব্যাভিচার ও বেহায়াপনা ঘাঁটি গেঁড়ে বসলো। নারী-পুরুষের পারস্পরিক সন্তুষ্টির শর্তে ব্যভিচারের শাস্তি তুলে নেওয়া হল। তুরস্ক, ইরান, আফগানিস্তান, আলবেনিয়া, সোমালিয়া, আলজেরিয়াসহ আরো বহু মুসলিম দেশে যথারীতি আইনপাশ করে পর্দা পালনে শর্ত আরোপ করা হল আর পর্দানশীনা নারীদেরকে শাস্তির মুখোমুখি দাঁড় করানোর ঘোষণা দেওয়া হল।
0 Comments